রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
রাণীনগরের ঐতিহাসিক কাশিমপুর রাজবাড়ী এখন গোয়াল ঘর

রাণীনগরের ঐতিহাসিক কাশিমপুর রাজবাড়ী এখন গোয়াল ঘর

রহিদুল ইসলাম রাইপ
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঐতিহাসিক কাশিমপুর রাজবাড়ি এখন গোয়াল ঘরে পরিণত হয়েছে।
এটি পাগলা রাজার রাজবাড়ি হিসেবে বেশি পরিচিত। বর্তমানে এই রাজবাড়ির তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। শুধুমাত্র রাজবাড়ির প্রধান ফটকের কিছু অংশ ও কয়েকটি মন্দির ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন শরীরে নিয়ে নির্বাক দাড়িয়ে আছে মাত্র।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর পাশে ২ একর ১৯ শতক জমির ওপর কাশিমপুর রাজবাড়ি অবস্থিত।
এটি উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান হিসেবেও পরিচিত। কেউ কেউ পাগলা রাজার বাড়িও বলে। তবে শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। রাজবাড়ির কিছু অংশ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা এটিকে গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, কাশিমপুরের পাগলা রাজা নাটোরের রাজার বংশধর ছিলেন। শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সাল দেশভাগের পর রাজবংশের সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান।
শুধু ছোট রাজা শ্রী শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই রাজবাড়িতে বসবাস করতেন। সময়ের বিবর্তনে তিনিও রাজবাড়ির অঢেল সম্পত্তি রেখে ভারতে চলে যান।

প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ির কারুকার্য ও নিদর্শনসমূহ দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে আজ ধ্বংসপ্রায়। রাজবাড়ির প্রধান ভবনের সামনে চারটি গম্বুজ। উত্তর পাশে হাওয়াখানা ও পশ্চিম পাশে একটি দুর্গামন্দির ছিল। প্রতিনিয়ত এই মন্দিরে পূজা হতো। সন্ধ্যায় জ্বালানো হতো প্রদীপ। দেওয়া হতো শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি। মন্দিরের পাশে ছিল একটি বৈঠকখানা। পুকুর ও নদীর ধারে ছিল বালিকা বিদ্যালয়। বর্তমানে রাজবাড়ির একটি অংশে কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্দিরের কিছু অংশ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল হালিম বলেন, এই রাজবাড়িটি তিন তলা বিশিষ্ট ছিল। অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়িটির শেষ অংশটুকুও এখনো দেখতে অনেকেই আসে। তবে ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে এটিকে ঘিরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্র।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, রাজবাড়ির জমিগুলো দখলদাররা বিভিন্ন উপায়ে উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চাতাল, মিল, কলকারখানা ও বসতবাড়ি তৈরি করেছে। এছাড়া উঁচু জমি কেটে সমতল করে ধান চাষ করা হচ্ছে। রাজবাড়িটিকে সরকারের দ্রুত সংরক্ষণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বাবু বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কায়দায় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ইজারা নেওয়ার কথা আমি শুনেছি। এমনকি বড় বড় দালানকোঠা ঘেরা প্রাচীর ও রাজাপ্রাসাদের ইট খুলে প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি করে দিচ্ছে। সংরক্ষণের অভাবে রাজার বাড়িটি আজ মৃতপ্রায়। যতটুকু নির্মাণশৈলী কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা যদি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করে তাহলে এখানেও গড়ে উঠতে পারে দর্শনীয় স্থান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, স্থানীয়ভাবে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। তবে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই সব নির্দশনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব পালন করে থাকে। আমি রাজবাড়ির অবশিষ্ট এই নির্দশনকে রক্ষা করার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানাবো। আর নতুন করে কাউকে জায়গা লিজ দেওয়া হবে না। যে সব জায়গা লিজ দেওয়া আছে, তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। এই কাজটি করার জন্য আমি সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। কারণ আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD